শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
সাহিত্য ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চিনতে ভুল করেননি তাই তো তিনি ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুলের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক উদার মনের কবি একজনও নেই। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিলো মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। আজকের বাংলাদেশ প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলো বলেই সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে ও এ দেশের জাতিকে চিনে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন আর প্রধানমন্ত্রী দেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন বৃহস্পতিবার আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় সম্মানিত অতিথি (গেস্ট অব অনার) হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমীন মাদানী এমপি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দে, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাহাবউদ্দিন। এতে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ও কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. মোকারেরম হোসেন মাসুম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭২ সালে কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমরা প্রস্তাব দেই। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধিকে ফোন করে কবি নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন এবং কবির জন্মবার্ষিকী পালন করি। ধানমন্ডির যে বাসায় কবিকে রাখা হয়েছিল সেখানে প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে পতাকা নামানো হতো। অর্থাৎ কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি আরো বলেন, কোনো কবিকে দুটি দেশে একই সাথে এমন সম্মাননা আর কাউকে দেওয়া হয়নি। দুই দেশেই কবির নামে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের কাজ হবে কবির গান, সাহিত্য ও জীবনী সংগ্রহ ও অবিকৃতভাবে চর্চা করা। তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক একটি নজরুল বিষয়ক কোর্স রাখায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সকল হিংসা-বিদ্বেষকে বিসর্জন দিয়ে কবির মতো মানুষের প্রেমে পড়তে হবে আমাদের। নজরুল সাহিত্য এবং নজরুল সঙ্গীতে অবদান রাখায় যে দুইজন গুণজনকে আমরা সম্মাননা দিতে পারলাম তাঁদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষক বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক শত ব্যস্ততার মধ্যেও কষ্ট করে এই অনুষ্ঠানে আসায় তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। এ ছাড়া অন্যান্য অতিথিবৃন্দসহ উপস্থিত সকলকে তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ হতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আলোচনাসভা শেষে নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. হায়াৎ মাহমুদ এবং নজরুল সংগীতে অবদানের জন্য শিল্পী জুলহাসউদ্দিন আহমেদকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা ২০১৯ প্রদান করা হয়। দুই গুণী ব্যক্তিত্বকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন, সম্মাননা স্মারক এবং ৫০ হাজার টাকা করে সম্মানী প্রদান করেন অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার, প্রধান অতিথি, সভাপতি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সম্মাননা প্রাপ্ত গবেষক অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, পুরস্কার পেলেও আমার কোনো অহংকার হয় না। আর যারা আমাকে সম্মানিত করেছেন তাঁরা আমাকে ভালোবেসেই করেছেন, আমিও আপনাদের সকলকেই ভালোবাসি।
সম্মাননা প্রাপ্ত সংগীত শিল্পী জুলহাসউদ্দীন আহমেদ তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি ধন্য। আপনাদের এই সম্মাননা আমি মাথায় তুলে নিলাম।
এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নজরুল গবেষকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ধ্যায় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০১৭ এর পুরস্কার প্রদান এবং বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩ দিনব্যাপী বইমেলা আজ শেষ হয়। বইমেলা উপলক্ষে বুক রিভিউ এর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো, প্রতিযোগিদের মধ্য থেকে তিন জনকে নির্বাচিত করে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। তবে বিশেষ কাজের কারণে তিনি উপস্থিত হতে না পারায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক এমপিকে।